প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে ক্যানসার থেকে পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব। রোগের মাত্রা বেড়ে গেছে বা দেহে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে তাকে আয়ত্তে এনে নির্মূল করা দুরূহ কাজ, ব্যয়বহুল তো বটেই। তাই জোর দিতে হবে ক্যানসার সচেতনতায়। জোর দিতে হবে টিউমারসহ ক্যানসারের অন্য লক্ষণগুলোর দিকে। জোর দিতে হবে ক্যানসার শনাক্ত করবার জন্য প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং, টিউমার টেস্ট ল্যাবগুলোর দিকে।
প্রতি বছর গড়ে ১৫ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছেন ক্যানসারে! তারপরও ক্যানসার প্রতিরোধে আমাদের বস্তুত তেমন কোনো বড় উদ্যোগ নেই। তৃণমূলে ক্যানসার সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে সরকার। অনেক সরকারি হাসপাতালে এখন ক্যানসার বিভাগ রয়েছে। ক্যানসারের ব্যয়বহুল ওষুধগুলো কিছু হাসপাতালে দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে- নিঃসন্দেহে এই উদ্যোগগুলো আশাজাগানিয়া। কিন্তু আমাদের মতো দেশের জন্য ক্যানসার চিকিৎসার চেয়ে বেশি মনোযোগ ক্যানসার প্রতিরোধে কি দেয়া উচিত নয়?
প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে ক্যানসার থেকে পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব। রোগের মাত্রা বেড়ে গেছে বা দেহে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে তাকে আয়ত্তে এনে নির্মূল করা দুরূহ কাজ, ব্যয়বহুল তো বটেই। তাই জোর দিতে হবে ক্যানসার সচেতনতায়। জোর দিতে হবে টিউমারসহ ক্যানসারের অন্য লক্ষণগুলোর দিকে। জোর দিতে হবে ক্যানসার শনাক্ত করবার জন্য প্রয়োজনীয় কাউন্সেলিং, টিউমার টেস্ট ল্যাবগুলোর দিকে। যতটা সম্ভব তা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায় দেশের ক্যানসার পরিস্থিতি ততটাই সামাল দেয়া সম্ভব হবে।
তার ওপর আছে চিকিৎসক সংকট! ক্যানসার বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পেশাগত উৎকর্ষের বাছ-বিচারে ক্যানসার ততটা লুক্রেটিভ হয়নি এখনও। মাঝপথে রোগ শনাক্ত করার কারণে রোগীর সুস্থ হওয়ার হার কমে আসে আর সেই সঙ্গে বাড়ে ব্যর্থ হওয়ার সংখ্যা। তাই জেনে বুঝে অনেক চিকিৎসক আর আগ্রহী হন না এই বিষয়ে নিজেকে বিশেষজ্ঞ হিসেবে গড়ে তুলতে। তাদেরকে আগ্রহী হিসেবে গড়ে তুলতেও তেমন কোনো আয়োজন চোখে পড়ছে না। উপরন্তু কাজ করার পরিধি আরও বাড়ছে।
রোগীর তুলনায় চিকিৎসক কম হওয়ায়, চিকিৎসকদের পক্ষেও রোগী ও তার পরিবারকে যথার্থ কাউন্সেলিং কিংবা যথার্থ ফলোআপে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। এই বাস্তবতার পরিবর্তন দ্রুতই হবে বলে মনে হচ্ছে না। এ তো গেল সচেতনতার অভাব চিকিৎসক আর রোগীদের, তাদেরকে সচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে নীতি নির্ধারকদেরও সচেতন করার প্রয়োজন আছে বৈকি!
ক্যানসার জীবনে ঢুকে পড়লে যে ছুটোছুটিটা শুরু হয় সেটা জীবনের আরেক বিড়ম্বনা। কোথায় কার কাছে যথার্থ চিকিৎসাটা মিলবে তা নিয়ে রয়েছে তথ্যবিভ্রাট। যোগাযোগের এই যুগে এখন পর্যন্ত শুধু ক্যানসার-বিষয়ক তথ্যগুলোকে এক জায়গায় সন্নিবেশিত করার কোনো জাতীয় উদ্যোগ এখনও চোখে পড়ে না। দুএকটা বেসরকারি উদ্যোগ দেখা দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।
ক্যানসার চিকিৎসা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি ক্যানসার সচেতনতনায় বেশি গুরুত্ব দেয়া ছাড়া ক্যানসারকে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। বিশ্বের নতুন এই নীরব মহামারিকে রুখে দিতে এখনই আমাদের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত। চাই পরিকল্পিত ও সমন্বিত উদ্যোগ।
লেখক: বোর্ড ডিরেক্টর, ওয়ার্ল্ড ওভারিয়ান ক্যানসার কোয়ালিশন